জাগরণী
নারী সহায়তা কেন্দ্র
বরগুনা
০১। ভুমিকা
নারীদের প্রতি সহিংসতা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, বাল্যবিবাহ রোধ, যৌতুকের জন্য মারধর এবং মেয়েদের প্রতি ইভটিজিং প্রতিরোধ ১২ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে বরগুনা জেলার জাগরণী, নারী সহয়তা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয় । জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সম্পূর্ণ নারী বান্ধব পরিবেশর নারী আফিসার ও ফোর্সের সমন্বয়ে জাগরণী, নারী সহয়তা কেন্দ্র যাত্রা শুরু করে। ইতোমধ্যে বরগুনা জেলার সর্বমহলে এর কার্যক্রম এবং পরিচালনা পদ্ধতি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। নারীদের প্রতি অপরাধ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে না দেখে সমষ্টির সামাজিক সমস্যা হিসাবে টিহ্নিত করে তার মূলে কাজ করাই মূলত: জাগরণী, নারী সহয়তা কেন্দ্র উদ্দেশ্য।
০২। বরগুনার অপরাধ প্রেক্ষাপট:
বরগুনা জেলা, বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে দুরবর্তী জেলা এবং পটুয়াখালী,ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার সাথে এটি সংযুক্ত। দক্ষিনে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। ভৌগলিক অবস্থা এবংঅতীত বৈশিষ্ট্যের কারনে সুদীর্ঘকাল হতেই বরগুনা জেলা একটি অপরাধ প্রবণ জেলা হিসাবে পরিচিত। সীমান্তের কারনে এখানে মাদকের যেমন প্রকোপ বেশী একইসাথে অতীত বৈশিষ্ট্যের ও গোষ্ঠ্যের আধিপত্যের কারনে দাঙ্গাপ্রবন এলাকা হিসাবে পরিচিত । সামাজিক অস্থিরতা, ভৌগলিক অবস্থা ইত্যাদি কারনে নারী নির্যাতনেও এ জেলা সারা বাংলাদেশে একটি আলোচিত ভুমন্ডল হিসাবে বিবেচিত।
০৩। নারী নির্যাতন ও বরগুনা:
অন্যান্য অপরাধের ন্যায় বরগুনা জেলায় নারী নির্যাতন এবং এ খাতে মামলার সংখ্যা উল্লেখ্যযোগ্য। গত কয়েকমাস অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারী নির্যাতন মামলায় বরগুনা জেলা সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যৌতুকের জন্য স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নির্যাতনে সমস্যা সর্বাধিক। নারী নির্যাতনের মোট মামলার অর্ধেকের বেশী যৌতুকের জন্য মামলা খাতে রুজু করা হয়। গত জুন/১৬ হতে অক্টোবর/১৬ পর্যন্ত বরগুনা জেলা এ খাতে মামলার একটি পরিসংখ্যান নিচে দেয়া হল।
ক্র:নং |
মাসের নাম |
মোট মামলা |
১১(গ) |
মন্তব্য |
01 |
জুন/১৬ |
৫২ |
১০ |
জাগরনী গঠনের পূর্বে |
02 |
জুলাই/১৬ |
৫১ |
১৩ |
জাগরনী গঠনের পূর্বে |
03 |
আগষ্ট/১৬ |
৫০ |
১১ |
জাগরনী গঠনের পূর্বে |
04 |
সেপ্টেম্বর/১৬ |
৪৭ |
০৯ |
জাগরনী গঠনের পূর্বে |
05 |
অক্টোবর/১৬ |
৪০ |
০৭ |
জাগরনী গঠনের পূর্বে |
০৪। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি:
নারীদের প্রতি অপরাধ বিশেষ করে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নির্যাতন একটি পুরোনো ও জটিল সমস্যা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটি মেয়ে স্বামীর পরিবার কর্তৃক ক্রমাগত অত্যাচারিত হওয়ার শেষ পর্যায়ে এসে থানায় মামলা রুজু করে। এ ধরনের মামলা হওয়ার পর সাধারণত এ পরিবারটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পুরো পরিবারের উপর বিপর্যয় নেমে আসে । সামাজিক ভাবে এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয় নাই। মামলার দীর্ঘসূত্রীতা, বিচারে বিলম্ব এ সমস্যা আর ও প্রকট করেছে। এই জটিল বিষয়টি সামনে রেখে ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গিতে চিন্তা করা হয়। যদি মামলা রুজু হওয়ার পূর্বেই দুটি পক্ষকে সামনে রেখে কাউন্সিলিং করা এবং মামলা ছাড়াই দ্রুত সময়ে ন্যায় বিচার করা সম্ভব হয় তাহলে হয়ত: অনেক পরিবারকে বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে প্রতিকার করা সম্ভব হত। এছাড়া ও নারীরা তাদের অনেক সমস্যার বিষয়ে যেমন ইভটিজিং বিভিন্ন বখাটেদের মাস্তানী, স্বামীগৃহে বিভিন্ন বিরুপ পরিবেশের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানাতে আগ্রহী হয় না। ফলে সমস্যা দিন দিন প্রকট হয়। সুতরাং নারীদের জন্য যদি এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় যেখানে তারা তাদের অভিযোগ জানাতে সাচ্ছন্দ বোধ করবে এবং দ্রুত প্রতিকার পাবে তাহলেই নারীর বিরুদ্ধে সহিসংতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
০৫। বরগুনা জাগরণী, নারী সহয়তা কেন্দ্র:
০১ (এক) জন মহিলা এস আই, ০১(এক) জন মহিলা এ এস আই ও ০১(এক) জন মহিলা কনস্টেবল নিয়ে জাগরণী, নারী সহয়তা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে। জটিল বিষয়সমূহ পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হচ্ছে । এবং পুলিশ সুপার ব্যক্তিগত ভাবে দু’পক্ষের সাথে আলোচনা করে সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ১২ নভেম্বর ২০১৬ যাত্রা শুরুর পর ০৯ই জানুয়ারি ২০১৭ তারিখ পর্যন্ত জাগরণী, নারী সহয়তা কেন্দ্র মোট ৪৭ টি অভিযোগ গ্রহন করেছে এবং ৪৪ টি অভিযোগই নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে । মাত্র ০৩ টি ক্ষেত্রে কোন ভাবেই দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা সন্তব না হওয়াতে থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।জুলাই ২০১৬ সাল হতে অত্র জেলায় নারী নির্যাতন মামলার একটি চিত্র বিষয়টি আরও পরিস্কার করবে।
ক্র:নং |
মাসের নাম |
মোট মামলা |
১১(গ) |
মন্তব্য |
01 |
জুন/১৬ |
৫২ |
১০ |
জাগরনী গঠনের পূর্বে |
02 |
জুলাই/১৬ |
৫১ |
১৩ |
জাগরনী গঠনের পূর্বে |
03 |
আগষ্ট/১৬ |
৫০ |
১১ |
জাগরনী গঠনের পূর্বে |
04 |
সেপ্টেম্বর/১৬ |
৪৭ |
০৯ |
জাগরনী গঠনের পূর্বে |
05 |
অক্টোবর/১৬ |
৪০ |
০৭ |
জাগরনী গঠনের পূর্বে |
06 |
নভেম্বর/১৬ |
৩১ |
০৬ |
জাগরণী গঠনের পর |
07 |
ডিসেম্বর/১৬ |
২৩ |
০৪ |
জাগরণী গঠনের পর |
০৬। উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের কর্মপদ্ধতি:
জেলা ০৬ (ছয়) টি থানাতেই পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। যৌতুকের জন্য যে কোন মামলার অভিযোগ থানায় সরাসরি মামলা রুজু না করে অভিযোগকারী পক্ষ ও বিবাদী পক্ষকে একসাথে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেরণ করবে। উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের অফিসারবৃন্দ ০২ পক্ষের সমস্ত যুক্তিতর্ক শুনে মিমাংসা করার চেষ্টা করবে না হলে পুলিশ সুপারের কাছে পাঠাবে এবং পুলিশ সুপার নিজে কাউন্সিলিং করে সমাধানের চেষ্টা করবে।
০৭। উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের বৈশিষ্ট্য:
০১। দ্রুততার সাথে অভিযোগ সমূহ নিষ্পত্তি।
০২। বিরোধীয় পক্ষের আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ বা আইনজীবীর মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ।
০৩। হয়রানী মুক্ত পরিবেশ।
০৪। কোন রকম আর্থিক অনিয়ম সংশ্লিষ্টতা মুক্ত পরিবেশ।
০৫। পুলিশ সুপার, সরাসরি উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে সিন্ধান্ত প্রদান করেন।
০৬। জেলা জজ আদালতে লিগ্যাল এইড থেকে প্রেরিত অভিযোগ সমুহ গ্রহণ।
০৭। ইভটিজিং এর ক্ষেত্রে পরিচয় গোপন রেখে ব্যবস্থা নেয়।
০৮। উপসংহার:
জাগরণী, নারী সহয়তা কেন্দ্র যাত্রা শুরুর পর নারী নির্যাতনের মামলা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। কিন্ত মামলা হ্রাস করা এ সেন্টারের উদ্দেশ্য নয়। দ্রততার সাথে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করাই এ সেন্টারের মূল উদ্দেশ্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে । একটি সংসার ভেঙ্গে যাওয়া নয় সংসার টিকে রাখা এ সেন্টারে মূল উদ্দেশ্যে। কোন ক্ষেত্রে সংসার টিকেই রাখা কোন ভাবেই সম্ভব না হলে এখানে বসেই ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেন মোহর ও খোরপোষের টাকা পরিশোধ করে বিচ্ছেদ ঘটনো হচ্ছে।
যোগাযোগ :
এসআই জান্নাতুল ফেরদৌস
ইনচার্জ, জাগরণী, নারী সহায়তা কেন্দ্র,
পুলিশ সুপারের কার্যালয়, বরগুনা।
মোবাইল-01758302325
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস